দানশীলতা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই একটি মহৎ গুণ। কুরআন এবং হাদিসে দান-সদকার বহু ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘দানশীলতা জান্নাতের একটি বৃক্ষ। যা তাকে জান্নাতে পৌঁছে দিবে’ (মিশকাত শরীফ)।
মানুষের উপকারের জন্য সাধারণ দান-সাদকা করা অন্যতম সওয়াবের কাজ। অর্থনৈতিক টানা-পোড়নে যখন গরিব-অসহায় মানুষ দিশেহারা; সে সময় সামান্য দান-সাদকাও অভাবি মানুষের জন্য খুবই গুরুত্ববহন করে। সম্পদশালীদের জন্য দান-সাদকা দুনিয়ার জীবন ও পরকালের জন্য খুবই ফজিলতপূর্ণ। এটি মানুষের সম্মান ও গৌরব বৃদ্ধি করে। সে কারণে যথাযথ সম্মান, মর্যাদা তথা ইজ্জত, হুরমত ও তাজিমের সঙ্গে সযত্নে গরিব-দুঃখী ও অসহায়দের মাঝে দান-সাদকা করতে হয়। দান-সাদকাকে সম্মানজনক ইবাদত-বন্দেগি ও পবিত্র মনে করা দানকারীর অন্যতম কর্তব্য।
দান সদকার কিছু ইহকালীন ও পরকালীন গুরুত্ব ও ফযীলত তুলে ধরা হলো—
রিজিকে বরকত: অনেকের মনে হতে পারে, অভাবের দিনে দান-সদকা করব কিভাবে! কিন্তু কোরআন বলছে, দান-সদকা অভাব দূর করে। সম্পদ বাড়িয়ে দেয়। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের উপমা একটি বীজের মতো, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে এক শ শস্যদানা। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেন।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি হালাল কামাই থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদকা করবে (আল্লাহ তা কবুল করবেন) এবং আল্লাহ শুধু পবিত্র মাল কবুল করেন আর আল্লাহ তাঁর ডান হাত দিয়ে তা কবুল করেন। এরপর আল্লাহ দাতার কল্যাণার্থে তা প্রতিপালন করেন; যেমন তোমাদের কেউ অশ্ব শাবক প্রতিপালন করে থাকে, অবশেষে সেই সদকা পাহাড় বরাবর হয়ে যায়।
আত্মপরিশুদ্ধি করা: পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী, তাদের ধন-সম্পদ থেকে সদকা নিয়ে তাদের পাক-পবিত্র করুন, (নেকির পথে) তাদের এগিয়ে দিন এবং তাদের জন্য রহমতের দোয়া করুন।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১০৩)
এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, সদকার মাধ্যমে তার উম্মতদের পরিশুদ্ধ করে নিতে। অনেক তাফসিরবিদরা এই আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখেন, সদকা আখলাক পরিশুদ্ধ করার একটি অন্যতম মাধ্যম।
পাপ মোচন: দান-সদকার মাধ্যমে পাপের বোঝা হালকা হয়। তাই মানুষের বেশি বেশি দান-সদকা করা উচিত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, “যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান করো তবে তাও উত্তম, আর যদি তোমরা তা গোপনে করো এবং তা অভাবগ্রস্তদের দান করো, তবে তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম, অধিকন্তু তিনি তোমাদের কিছু গুনাহ মোচন করে দেবেন, বস্তুত যা কিছু তোমরা করছ, আল্লাহ তার খবর রাখেন।”
আরশের ছায়াতলে আশ্রয়: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, যেদিন আল্লাহর (রহমতের) ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক, ২. সে যুবক, যার জীবন গড়ে উঠেছে তার প্রতিপালকের ইবাদতের মধ্যে, ৩. সে ব্যক্তি, যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে, ৪. সে দুই ব্যক্তি, যারা পরস্পরকে ভালোবাসে আল্লাহর জন্য, একত্র হয় আল্লাহর জন্য এবং পৃথকও হয় আল্লাহর জন্য, ৫. সেই ব্যক্তি, যাকে কোনো উচ্চ বংশীয় রূপসী নারী আহ্বান জানায়, কিন্তু সে এ বলে প্রত্যাখ্যান করে যে ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’, ৬. সে ব্যক্তি, যে এমন গোপনে দান করে যে তার ডান হাত যা খরচ করে বাঁ হাত তা জানে না, ৭. সে ব্যক্তি, যে নির্জনে আল্লাহর জিকির করে, ফলে তার দুই চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে। যারা গোপনে দান করবেন মহান আল্লাহ কঠিন কিয়ামতের দিন তাদের আরশের ছায়াতলে স্থান দেবেন।
জাহান্নাম থেকে মুক্তি : মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করলে জাহান্নাম থেকে মুক্তির আশা করা যায়। কেননা নবীজি (সা.) জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বেশি বেশি সদকা করার তাগিদ দিয়েছেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার ঈদুল আজহা অথবা ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের জন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি মহিলাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, হে নারী সমাজ, তোমরা সদকা করতে থাকো। কারণ আমি দেখেছি, জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই বেশি। তারা জিজ্ঞেস করলেন, কী কারণে, হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বলেন, তোমরা বেশি পরিমাণে অভিশাপ দিয়ে থাকো আর স্বামীর অকৃতজ্ঞ হও।
সাধারণ সদকা ফাউন্ডেশনকে সমর্থন করার জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ করে। মূলত, সমস্ত দাতব্য কার্যক্রম সাধারণ অনুদানের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সাধারণ অনুদানের জন্য কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ নেই; আপনি যে কোন পরিমাণ দান করতে পারেন। আর যে কোনো নেক আমল বেশি অনিয়মিত হওয়ার চেয়ে কম নিয়মিত করা উত্তম। সর্বোপরি দানে রোগ, বালা-মুসিবত থেকে বেঁচে থাকা যায়, হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রসুল সা. বলেন, ‘তোমরা অধিক হারে সদকা করো। কেননা বালা-মুসিবত সদকাকে অতিক্রম করতে পারে না।’ (বায়হাকি ৮০৮৩)